Tuesday, May 28, 2013

গাজীপুরে আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীদের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

গাজীপুর মহানগরের সামগ্রিক শিক্ষার গুনগত পরিবর্তন, যানজট কমানোসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিবেশ দূর্ষ‌ণ রোধ ও শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ইন্ডাস্ট্রিয়ার পার্ক নির্মান এবং মহানগরের নাগরিকদের ফরমালিন ও ভেজাল মুক্ত ফলমুল খাদ্র দ্রব্যের নিশ্চয়তাসহ স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা এই ৪ টিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সমাধানের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিজের প্রর্থীতা ঘোষনা করলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জাহঙ্গীর আলম।

সোমবার সকালে জয়দেবপুর শহরের শহীদ বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষান দেয়া হয়। সম্মিলিত নাগরিক কমিটির আহবায়ক ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সন্মেলনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া ও গাজীপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দেন।

এসময় সম্ভ্যাব মেয়র প্রর্থী জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে বলেন, নাগরিকদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য মহানগরের শিক্ষার গুনগত মান ও শিক্ষার সুষ্ট পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করা । যানজট নিরসন ও নাগরিকদের চলাচলে সুবিদার্থে বিভিন্ন স্থানে ফ্লাই ওভার নির্মান করে পরিকল্পিত যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশের বিপর্যয় রোধে ইন্ডষ্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করা হবে। মহানগরের হাট বাজার গুলো ভেজাল ও ফরমালিন মুক্ত রাখাসহ মহানগরের নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি করা হবে।

এসময় বক্তারা বলেন, মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী বা মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের সমর্থন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কোনপ্রকার আলোচনা ছাড়াই ১৪ দলের পক্ষ থেকে মেয়র পদে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় ভোটারদের মাঝে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন ও এলাকাবাসির চাহিদা পূরণ করতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে সন্মিলিত নাগরিক কমিটি-গাজীপুরের পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেয়া হলো।সংবাদ সম্মেলনে জেলায় কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, রবিবার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক টঙ্গী পৌর সভার মেয়র এ্যাভোকেট আজমত উল্লাহ খানের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের মতে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দিতা করলে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ছাত্রলীগ নেতা ও ভাইস চেয়াম্যানকে প্রার্থীকে মেয়র প্রর্থী হিসেবে ঘোষনা করায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গাজীপুরের চাপুলিয়া এলাকার যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন জানান, এলাকা বাসি নতুন নেতৃত্ব দেখতে চায়। তাছাড়া এলাকায় তরুন নেতা হিসেবে এবং দলমত নির্বিশেষে ইতোমধ্যেই জাহাঙ্গীরের ব্যপাক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

জয়দেবপুর বাজারের ব্যবসায়ী আওয়ামী সমর্থক নিউটন জানান, ১৪ দল সমর্থীত মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা, অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে বিপুর জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। একক প্রার্থী দিলে মেয়র পদে আজমত উল্লাহই বিজয়ী হবে।

আর বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকার ভিত্তিতে আওয়ামীলীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ঘটনায় দলের অবস্থান জানতে চাইলে গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোটেক ওয়াজ উদ্দিন জানান, এটি স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচন, জনগন চাইলে যে কেউ নির্বাচিত হতে পারে।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে শুরু করছেন আগ্র্রহী প্রার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র কিনেছে এদের মধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য প্রর্খীদের মাঝে প্রথম মনোনয়ন সংগ্রহ করেন জেলা বিএনপি নেতা কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার।

জাতীয় পার্টির বিগ্রেডিয়ার মাহমুদ হাসান ও তৃণমূল জনতা পার্টির প্র্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ যোগ্য । এছাড়া ওয়ার্ড কমিশনার পদের জন্য ১০২ টি এবং সংরক্ষিত আসনের জন্য ৪৩ টি মনোনয়ন পত্র প্রার্থীরা সংগ্রহ করছে বলে নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে। তাদের দলীয় সমর্থন এখনো চুড়ান্ত

অপর দিকে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে মহানগরের সর্বত্রই চলতে ভোটার দের নানা হিসেব নিকেশ। তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।

গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন হবে আগামী ৬ জুলাই। আর এ নির্বাচনে কে হবেন প্রথম মেয়র এ নিয়ে বড় দুই দলের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে চলছে নানা হিসাব নিকাশ ও ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।

মেয়র পদে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে। অন্যদিকে নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির একাধিক প্রার্থী অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যেও গ্রুপিংএর সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও দলের হাই কমান্ড গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহনের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেও কেউ কেউ প্রার্থী হবেন বলে জানাগেছে। তবে আপাতত বিএনপি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা দলের সমর্থন নিয়েই প্রার্থী হওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান, সাবেক এমপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার।

এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার, জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দলের নেতা মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এ) প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) কাজী মাহমুদ হাসান মেয়র পদে প্রার্থী হবেন। এ জন্য তিনি অনেক আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে গাজীপুর সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ হোসেন আলীকে সম্ভব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাদের সমর্থন দিয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় এলাকায় তার পরিচিতি আছে।

বড় দল গুলোতে পারস্পারিক রেশারেশির রাজনীতি, দলের অভ্যান্তরীন কোন্দল, স্বজপ্রীতি, দূর্নীতির কারনে জনগন তাদের উপর বিরক্ত বলে মনে করে জামায়েত। এদিকে মহাসগরবাসির মধ্যে জামায়াত ও ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে বিপুল সংখ্যক জনসাধারনের সমর্থন রয়েছে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের ঘটনায় বর্তমান শাসক শ্রেনীর সমর্থন হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করে জেলা জামায়াত।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভার ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) গঠন করা হয়। তবে নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সিমানা নির্ধারণ এবং তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভোটার তালিকা সংশোধন কাজ শেষ না হওয়ায় গত ২৯ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষনা করা হয়নি।

ঐ দিন গাজীপুর ছাড়া সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষনা করা হয়েছিল। আর এসব সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে ১৫ জুন। অপর দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৬ জুলাই।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনের আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ৬ জুনের মধ্যে। মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ ও ১০ জুন এবং প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ জুন পর্যন্ড।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৭জন, মহিলা ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬১ জন। ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।